অনলাইন নিউজ ডেস্ক ::
বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ্ আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাকে খুন করা হয়েছিল— এ প্রশ্ন থামেনি এখনও। মৃত্যুর ২০ বছরেও পুরোপুরি মীমাংসা না হওয়া বিষয়টি এবার যেন নতুন বাঁক পেল।
সালমান শাহ্ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রাবেয়া সুলতানা রুবি ৬ আগস্ট (গতকাল) ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। যেখানে তিনি স্বীকার করেন, নব্বই দশকের সবচেয়ে সফল এ নায়ককে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নিজে এতে যুক্ত না থাকলেও তার স্বামী জ্যানলিন চ্যান, ছোট ভাই রুমী, সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ বেশ কয়েকজন হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। আমেরিকা প্রবাসী এ নারী ঠিক কোথায় থেকে এ ভিডিওটি প্রকাশিত করেছেন তা উল্লেখ করেননি। তবে তিনি যে বেশ আতঙ্কগ্রস্ত, ভিডিওটিতে তা ফুটে ওঠে।
ইউটিউবে প্রকাশিত এ ভিডিওটিতে তিনি জানান- জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে।
রাবেয়া সুলতানা রুবি বলেন, ‘সালমান শাহ্ আত্মহত্যা করেনি, সে খুন হয়েছে। আমার হাজব্যান্ড এটা করিয়েছে আমার ভাইকে দিয়ে। সামিরার ফ্যামিলি এটা করিয়েছে আমার ভাইকে দিয়ে আর সবাই মিলে- বাকিরা সব চাইনিজ মানুষ। আমি রুবি এখানে ভেগে এসেছি। এই কেস যেন না শেষ হয়। আমি যেভাবে পারি ঠিকমতো যেন সাক্ষী দিতে পারি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমাকেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দয়া করে আমার জন্য দোয়া করেন, আমি ভালো নাই। আমি কী করব আমি জানি না, শুধু এইটুকু জানি-সালমান শাহ্, মানে ইমন আত্মহত্যা করেনি, তাকে সামিরা, আমার স্বামী ও সামিরার পরিবারের সবাই মিলে খুন করেছে। প্লিজ কিছু করেন।
এরা কী মানুষ (চাইনিজ কমিউনিটি)– আপনারা জানেন না। আমি ভেগে এসেছি এইখানে। দয়া করে আপনারা কাউকে জানান। আমার ছোট ভাই রুমীকে দিয়ে খুন করানো হয়েছে। পরে রুমীকেও খুন করানো হয়েছে। আমি জানি না রুমীর কবর কোথায় করা হয়েছে। রুমীর লাশ তুলে যদি আবার পোস্টমর্টেম করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে- তাকেও খুন করা হয়েছে। এরমধ্যে আমার খালু মমতাজ হাসান আছে, খালাতো ভাই জুম্মা থাকতে পারে।’
তার স্বামীর পরিচয়ও তিনি তুলে ধরেন, ‘আমার হাজব্যান্ড জ্যানলিন চ্যান, জন চ্যান নামে বাংলাদেশে পরিচিত ছিল, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে সাংহাই চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিক ছিল। আমিই লাস্ট মানুষ যে কিনা খুনের বিষয়ে জানি। আর আমি এটা প্রমাণ করতে পারবো ইনশাল্লাহ। দয়া করে একটু সাহায্য করেন, একটু সাহায্য করেন। এরা বাসার মধ্যে আমাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সুযোগ করতে পারেনি। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তুমি আমাকে খুন করতে চাও, না? ও আমাকে বলেছে– তোকে তো খুন করলে সেই কবেই খুন করতাম। এটা তো আমি জানি যে, আমাকে খুন করতে চায়, কারণ আবার কেসটি ওপেন হয়েছে। প্লিজ দয়া করে কিছু করেন।’
সালমানের মা নীলা চৌধুরীকে উদ্দেশ করে রুবি বলেন, ‘নীলা ভাবি, আপনার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আমি ভেগে আসছি। না হলে আমাকেও মেরে ফেলতো ওরা সবাই মিলে।’
উল্লেখ্য, রুবি এর আগেও বিভিন্ন সময় ভিডিও বার্তা প্রকাশিত করেছেন। তখন বরাবরই সালমান শাহ্ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। উল্টো সালমান ও তার মাকে বিভিন্নভাবে অভিযুক্ত করেছেন।
ভিডিওটি:
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ্ নিহত হন। তখন সালমানের বাবা কমরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। সালমানের বাবা ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই রিজভি আহমেদ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে বাসায় অনধিকার প্রবেশের অভিযোগ এনে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রিজভি আহমেদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দাবি করে বসেন, সালমানকে খুন করা হয়েছে। তার দাবি, এই হত্যার পেছনে আছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, তার শাশুড়ি লতিফা হক, চলচ্চিত্রের খল চরিত্রের অভিনেতা ও সালমানের বন্ধু আশরাফুল হক ওরফে ডন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
এদিকে বর্তমান ভিডিওটি নিয়ে সালমান শাহ্ হত্যা মামলার আসামি অভিনেতা ডনকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘রুবি নামের এই মহিলাকে আমি কখনও দেখিনি। তার ভিডিও সম্পর্কেও আমি কিছু জানি না।’.
রুবির বক্তব্যটি নিয়ে সালমানের মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি কারণ তিনি এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তবে ভিডিওটি দেখে ফেসবুক এক পোস্ট লিখেছেন নীলা চৌধুরী। লেখেন, ‘প্রিয় দেশবাসী। আমাকে সাহায্য করুন। দেখুন রুবি সুলতানার স্বীকারোক্তি। কীভাবে সালমানকে হত্যা করা হয়েছে! যেভাবে পারেন এফবিআইকে জানান, বাংলাদেশের সব চ্যানেলকে অনুরোধ করছি রুবির স্বীকারোক্তিটা প্রচার করুন।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল থেকে প্রয়াত এ নায়কের হত্যা মামলা চলে আসছে। বাবা কমরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা দায়ের করেছিলেন।
এরপর থানা-পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, র্যাব একে একে মামলাটির তদন্ত করে। মাঝখানে ১৫ বছর ধরে চলেছে বিচার বিভাগীয় তদন্তও। সব কটি তদন্ত প্রতিবেদনেই এটিকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পুলিশের নবগঠিত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
পাঠকের মতামত: